রফিকুল ইসলাম – কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের এক অভিযানে শহরের কোর্টপাড়ার বারো শরীফ দরবার এর পার্শ্ব থেকে ৩ জন দেহ ব্যবসায়ী ও ১জন ভূয়া পুলিশের এস.আই কে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন-কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার মশান এলাকার মোঃ তমছের আলীর মেয়ে মোছাঃ তানিয়া খাতুন (২৫), কুষ্টিয়া শহরের থানা পাড়া এলাকার মোঃ শহিদুলের স্ত্রী মোছাঃ সালমা বেগম (৩০), বারখাদা ত্রিমোহনী পল্লী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশের এলাকার মোঃ আনছার আলী পিয়াদার মেয়ে মোছাঃ বেবী খাতুন (৩৫), ও ভুয়া পুলিশের এস.আই বারখাদা ত্রিমোহনী এলাকার আতোর আলী শেখের ছেলে মোঃ শাহারুল ইসলাম (৩০)।
আটককৃত ৩ জন মহিলা দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ও তাদের সাহায্যকারী পুরুষ নিজেকে পুলিশের এস.আই হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাদের দেহ ব্যবসা ও প্রতারণার কাজে লিপ্ত ছিল। পুলিশ ৪জনকে আটক করলেও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ১জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে ।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া মিরপুর এর পদ্মা (ছদ্ম নাম) নামের মেয়ে কুষ্টিয়া কোর্টপাড়ার দরবার শরীফের পাশেই গত তিন-চার দিন আগে বাসা ভাড়া নেন। সে মূলত নারী দেহ ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট পরিচালনা করার জন্যই উক্ত বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল ।
সোমবার (৮ই ফেব্রুয়ারী) একজন মধ্যবয়স্ক এবং একজন যুবক পদ্মার ভাড়ার বাসায় আসেন অবৈধ কাজ করার জন্য । কিন্তু পদ্মা যে প্রতারক সেটা তাদের জানা ছিল না । পরবর্তীতে পদ্মা জানান, তিনি যাকে স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি আসলে তার স্বামী নয় এবং তিনি সাংবাদিক বলে নিজেকে পরিচয় দিতেন । পদ্মাসহ এই সিন্ডিকেটের কাজ ছিল তাদের কাছে যারা আসত তাদেরকে জিম্মি করে এবং ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া ।
পদ্মার বাসায় আগত ২জনের মধ্যে ১জনকে পদ্মা ও অপর জনকে অন্য একটি মেয়ে নিয়ে পৃথক দুই রুমের মধ্যে চলে যায় ।
এরপর পুলিশ পরিচয় প্রদানকারী এক যুবক এবং সাংবাদিক পরিচয়দানকারী অন্য আরেকটি যুবক এসে তাদেরকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে এবং তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে । তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা নেই বলে জানালে তখন নারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদেরকে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে । জিম্মির শিকার দুইজন তাদেরকে বাড়ি থেকে টাকা এনে দেবে বলে জানান। তারা ফোন দিয়ে তাদের বাড়িতে প্রকৃত ঘটনা না বলে টাকা নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন । এদিকে জিম্মির শিকার দুই ব্যক্তির স্বজনেরা বিষয়টি কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করেন ।
কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ পাওয়ার পরে তারা কুষ্টিয়া মডেল থানার এস.আই সাহেব আলীর নেতৃত্বে একটি টিমকে ঘটনার তদন্তের ভার দেন । এছাড়াও চাঁদা দাবী করা এই সিন্ডিকেটের দেওয়া একটি বিকাশ মোবাইল নম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ ট্র্যাকিং শুরু করে । অতঃপর তাদের দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলে নারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদেরকে কুষ্টিয়া শহরতলীর কাটাইখানা মোড়ে যাওয়ার জন্য বলেন ।
অতঃপর কুষ্টিয়া মডেল থানার এস.আই সাহেব আলীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ টিম এই নারী সিন্ডিকেটের ৩ নারী সদস্য সহ একজন ভুয়া পুলিশ পরিচয়দানকারী ব্যক্তিকে আটক করেন এবং পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তাদের সাথে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানায় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির জানান,
দোষীদের আটক করে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আসামীদেরকে আদালত প্রেরণ করা হয়েছে । এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি ।
আমরা আশাবাদী কুষ্টিয়া শহরে এই ধরনের যতগুলো সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে তাদেরকে অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।